সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: বিজয়ী হবার মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্রের মধ্যেই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীর ও তার সমথর্কদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ায় নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম খানের এলাকা নতুন ভাঙ্গাবাড়ী শোকের মাতম চলছে। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে ও স্বজনসহ শহরের সকলেই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ছুরিকাঘাতে নিহতের পর নতুন ভাঙ্গাবাড়ী মহল্লায় উত্তেজনা দেখা দেয়। হামলা-সংঘর্ষে বেপারীপাড়া মহল্লার পাঁচটি হোন্ডা ও একটি প্রাইভেটকার দুটি বাড়ী আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘাতকদের গ্রেফতারের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ এলাকায় মিছিল করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেপারী পাড়া ও নতুন ভাঙ্গাবাড়ীর মোড়ে মাড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জানা যায়, নতুন ভাঙ্গাবাড়ী, বেপাড়ীপাড়া ও শহীদগঞ্জ তিনটি গ্রাম মিলে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড গঠিত। নির্বাচনে বেপারীপাড়া থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন বুদ্দিন ও নতুন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম থেকে তরিকুল ইসলাম খান কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। শনিবার ভোটগ্রহণ শেষে বেপাড়ী পাড়া ও নতুন ভাঙ্গাবাড়ী কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হলেও শহীদগঞ্জ কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হয়। এ কারণে তরিকুল ইসলাম খান কয়েকজন সমর্থক নিয়ে ওই কেন্দ্রে গেলে কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে ঢুকতে বাঁধা দেয়ায় তিনি গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রিজাইডিং অফিসার ফলাফল সীট দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়। এসময় হিসেব করে দেখা যায় তরিকুল ইসলাম ৮৫ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তৎখনাৎ সেখানে শ্লোগান দিলে একই স্থানে থাকা পরাজিত প্রার্থী শাহাদত হোসেন বুদ্দিন ও তার সমর্থকরা তরিকুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের উপর হামলা চালায়।
একপর্যায়ে বুদ্দিনের সমর্থকরা কাউন্সিলর তরিকুলকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। গুরুত্বর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই তরিকুলের গ্রামের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শাহাদত হোসেন বুদ্দিনের গ্রাম বেপারী মহল্লায় হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ী ও বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। শনিবার রাত থেকেই থেকেই বেপারী মহল্লায় থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে। কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে নিহত তরিকুল ইসলামের গ্রাম নতুন ভাঙ্গাবাড়ী মহল্লায় শোকের মাতম চলছে। সকাল থেকে ওই এলাকায় খুনীদের গ্রেফতারের দাবীতে শতশত নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করতে থাকে। দুপুরের পর ময়নাতদন্ত শেষে কাউন্সিলর তরিকুল ইসলামের মরদেহ বাড়ীতে আনা হলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আছরের নামাজ পর ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে রহমতগঞ্জ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাযার পূর্বে সমাবেশে এলাকার মুরুব্বীরা খুনী শাহাদত হোসেন বুদ্ধিনসহ অন্যান্যদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। গ্রেফতার না হলে পুরো গ্রাম একত্রিত হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন।
অন্যদিকে, দুপুর বারোটার দিকে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এটিএম মোজাহিদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমসহ পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা নিহত কাউন্সিলের বাড়ীতে যান। পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া না হলেও রাত থেকেই ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে এ মুহুর্তে আমরা কোন তথ্য দিবো না। একটু ধের্য্য দিলে মামলার বিষয়ে ভাল সুসংবাদ দিতে পারবো।
তিনি আরো জানান, পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দেয়ার পর সে বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।