নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও-লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিন বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ যৌনাচারের শিকার হওয়ার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থেকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢামেক মর্গে আনুশকার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ডা. সোহেল মাহমুদ।
ময়নাতদন্তের পর ডা. সোহেল সাংবাদিকদের বলেন, মাস্টারমাইন্ডের ওই শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে পাওয়া গেছে, ওই শিক্ষার্থীর যৌনাঙ্গ ও পায়ু পথ দুই দিক দিয়েই রক্তক্ষরণ হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, তা জানতে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একাধিক ব্যক্তি এ ঘটনায় জড়িত কি না, তা জানতে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। মেয়েটির ভিসেরাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
আনুশকা নুর আমিনের বয়স জানতে চেয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে ডা. সোহেল বলেন, পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে বয়স জানতে চেয়েছে। সে কারণে মেয়েটির মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এক্সরে করতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে এক্সরে করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এক্সরে ছাড়াই মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তার শরীরের গঠন ও দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আনুশকার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যান কলাবাগান থানা পুলিশের একজন কনস্টেবল। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এ অভিযোগে মেয়েটির চার সহপাঠীকে আটক করা হয়। এরই মধ্যে এ ঘটনায় মেয়েটির মায়ের দায়ের করা মামলায় ইফতেখার দিহানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আনুশকাকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন দিহান। আদালতে এ সংক্রান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।
নিহত আনুশকার এক মামা জামিল হোসেন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, দিহান নামে ওই ছেলেই আনুশকাকে ফোন করে ফুসলিয়ে কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়লে দিহানই তাকে ধানমন্ডি আনোয়ার খান মর্ডান হানপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে দিহান আনুশকার মাকে ফোন করে জানায়, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল, সেখানে সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। তাকে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে আনুশকার মা মেয়ের মরদেহ দেখতে পান।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে মেয়েটিকে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে কলাবাগানের ওই বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এসময় মেয়েটিকে দিহানসহ তার বন্ধুরা আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে চিকিৎসকরা মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ওই চার বন্ধুকে আটক করে। এরপর রাতে মেয়েটির মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় আনুশকা। মাস্টারমাইন্ড স্কুলে ও-লেভেল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল সে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলায়।