ফোকাস ডেস্কঃ মহামারি করোনাভাইরাস কেড়ে নিলেন আমাদের প্রাণ প্রিয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের জীবন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিক খোকন ‘দৈনিক সময়ের আলো’ পত্রিকার নগর সম্পাদক ছিলেন। ২৮ এপ্রিল তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
সাংবাদিক খোকনের মৃত্যুতে তার ছেলে আশরাফুল আবির বাবার মৃত্যুর আগের কয়েক দিনের অবস্থা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। লিখেছেন শেষ সময়ের অবস্থা কেমন ছিল। পাঠকের জন্য ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘আমি ও আমার পরিবারের কাছে মনে হচ্ছে যে আমরা হয়তো কোনো বাজে স্বপ্ন দেখলাম । কিন্তু এইটা যে আসলেই বাস্তবেই হয়ে গেলো আমরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে যেন একটা বাজে স্বপ্ন দেখে হয়তো ঘুমটা ভাঙলো।
আমার বাবা একজন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান,পরিশ্রমী একজন ব্যাক্তি ছিলেন। যিনি সারাটি জীবনে হয়তো নিজের কথা কখনো ভাবেননি। আমাদের জন্যই হয়তো সারাটা জীবন উৎসর্গ করে গেলেন। এই করোনা সংকটময় দিনেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটা দিন অফিস এ গিয়েছেন বাসায় এসেছেন। আমি এই নিয়ে আমার বন্ধুদের ও বলে ছিলাম যে আমরা খুব ভয়ে আছি। কারণ আমার আব্বু আর আপু দুই জন চাকরিজীবী পরিবারে এবং তারা প্রতিদিনই অফিসের গাড়ি দিয়েই অফিস এ আসা যাওয়া করেছেন।
আমার বাবা ৩-৪ দিন ধরে কাশি হচ্ছিলো। পরিমান টা দিন দিন বেড়েই চলছিল। আমার তখনই সন্দেহ হচ্ছিলো। আমি বাবাকে বললাম, আপনার করোনা হয়নি তো? সে হেসে বললো অরে ধুর বেটা টন্সিলের ব্যাথা। এইটা আগের থেকেই ছিল। ঐরকম কিছু না। কারণ সে চাচ্ছিলো বাসায় থেকেই ট্রিটমেন্ট নিয়ে সুস্থ হতে।
কারণ করোনা পজেটিভ হলে এলাকার ভিতর আতঙ্ক ছড়াবে। এছাড়া লজ্জার ভয়ে সে তখন ও এইটা সাধারণ ভাবেই দেখছিলো। আমি ও ভাবলাম যে হয়তো এইরকম জ্বর কাশি হয়তো সাধারণ হয়তো বাসায় ওষুধ খেলে গরম পানি খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আমি এই কয়দিন বাসায় সাধারণ ভাবেই কাটাচ্ছিলাম বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপেড করার জন্য অনেক কিছু শিখছিলাম।
কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল আম্মু ও জ্বর অনুভব করতে শুরু করলো তার দুই দিন আগে। তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মু কে বললাম বললো যে করোনার নমুনা দুই একদিনের ভিতরই নিতে আসবে বললো। কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল কাশির সাথে সাথে ফুসফুস মারাত্মক ভাবে আক্রমণ করছিলো মনে হচ্ছে। হয়তো বাবার গলায় চুলকাচ্ছিল।
আমি এর পরের দিন একটু দেরিতে উঠলাম দেখলাম আম্মু বাবাকে ভাতের জাউ রান্না করে খাওয়াচ্ছে। হটাৎ দেখলাম সে জানি কেমন করছে মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছে মনে হলো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। সে ওই মুহূর্তে এই লড়াইয়ের সাথে পেরে উঠতে পারে নি। আম্মুকে বললাম বললো সকালে অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেওয়া হইসে।
উত্তরার রিজেন্টে ব্যবস্থা করা হইসে। অ্যাম্বুলেন্স আসতেসে। আম্মু বললো তোর কাছে কি ভাংতি টাকা আছে আমাকে দে তো । আমার কাছে ৩৫০০ টাকা ছিল। আমি পুরাটাই আম্মুকে দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। আমি ঘরে পরার জামা পরেই অ্যাম্বুলেন্সে উঠে গেলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো এমনিতেই দেরি হয় গেসে।
আমি ভাবলাম হাসপাতাল এ হয়তো অনেকেই থাকবে আব্বুর জন্য অফিসের লোক। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি আর আম্মু ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। কারণ লোকডাউন থাকার জন্য গাড়ি তেমন চলে না রাস্তায়। এছাড়া অনেকেই হয়তো লক্ষণগুলো বর্ণনা শুনে হয়তো কেউ আসতে সাহস করছিলো না।
এইদিক সাবান আঙ্কেল সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো ঐখানে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছিল আইসিউইতে রেখে অক্সিজেন দেওয়ার। কিন্তু ডাক্তার বললো তার পালস নেই এবং ব্রেন ও অক্সিজেন নিচ্ছে না। ডাইরেক্টলি বললেনও না যে সে আগেই মারা গেছে। বললো আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি দোয়া করেন যদি ব্রেইন হটাৎ মিরাকেল ভাবে যদি কাজ করতে শুরু করে।
রাত ১০ টার দিকে আম্মুকে উপরে ডাকলো শেষ বারের মতো দেখার জন্য। তখন আম্মু ফোনে কয়েকজনকে জানিয়ে দেয়।
এছাড়া নিউজ স্ক্রলগুলাতেও অফিসিয়ালি আপডেট দিয়ে দেয় যে বাবা আর নেই। এখন বাবার করোনা টেস্ট হওয়ার আগেই মারা গেছেন। তাই এইটা অফিসিয়ালি বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করেন। ওনার মতো ভালো,সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ খুব কমই আছে সমাজে। এছাড়া আমি চাই না, এখন সবাই আমাদেরকে ডিমোটিভেট বা ভয়ভীতি দেখাক। আমরা এমনিতেই অনেক কঠিন সময় পার করছি।
আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করেই বাসায় আছি। বাসা বা এলাকা হয়তো লকডাউন হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে মনে করি সবাই আমাদের জন্য দোয়া করুক।
আমার বন্ধুরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য আমাদের সামনের দিনগুলো নিয়ে। আশা করি আমাদের পরিবার , আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ , ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি , বাংলাদেশ সরকার পাশে থাকবেন। বাস্তবতা কঠিন হয়ে গেছে তবুও বাস্তবতার সাথেই সব কিছু এখন এডজাস্ট করে নিতে হবে।
সবাই ভালো থাকবেন এবং সচেতন হবেন।আপাতত আর কিছু লিখতে চাচ্ছি না।